ফিডব্যাক কৌশল




দৈহিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় হলো ফিডব্যাক কৌশল। ফিডব্যাক কৌশলের মাধ্যমেই হোমিও স্ট্যাসিস বানায় থাকে। বহিঃকোষীয় তরলে কোনো উপাদান বা ফ্যাক্টরের স্বাভাবিক মাত্রার বিচ্যুতি ঘটলে তা স্নায়ুতন্ত্রে ধরা পড়ে। স্নায়ুতর এই বিচ্যুতি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। বিভিন্ন এন্ডোক্রিন গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ, পেশী সংকোচন ইত্যাদি নানা ধরনের এই বিচ্যুতি মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্র সংশ্লিষ্ট উপাদানের স্বাভাবিক মাত্রা আনায়ন করে। অস্বাভাবিকতা বা বিঢ়োতি ফিডবান্ধ কৌশলের সূচনাকারী ফ্যাক্টর রূপে ক্রিয়া করে।


সুচনাকারী উপাদান তথা ফ্যাক্টরের ক্রিয়া বা মাত্রাগত প্রভাব যখন প্রত্যাবর্ত হয়ে । সূচনাকারী ফ্যাক্টরকেই নিয়ন্ত্রণ করে তখন তাকে ফিডব্যাক কৌশল বলে ফিডব্যাক কৌশল দুধরনের। যথা-(১) ঋণাত্মক ও (২) ধনাত্মক। প্রধানত ঋণাত্মক জিও ব্যাক কৌশলই হোমিওস্ট্যাসিন রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। নিম্নে উদাহরণের সাহায্যে ফিড ব্যাক কৌশল ব্যাখ্যা করা হল



ফিডব্যাক কৌশল 


(1) ঋণাত্মক ফিডব্যাক কৌশল (Negative Feedback Tecnique): বহিঃকোষীয় তরলে কোন উপাদান তথা ফ্যাক্টরের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে যদি ফিডব্যাক কৌশলের প্রত্যাবর্ত প্রভাবে উক্ত উপাদানের বিপরীতমূর্ণ পরিবর্তন ঘটে তাকে ঋণাত্মক ফিডব্যাক কৌশল (Negative feed back mechanism) বলে।


দৈহিক ক্রিয়াকলাপ পরিচালনার জন্য শক্তি উৎসরূপে গ্লুকোজ অন্যতম এবং রক্তের একটি স্বাভাবিক উপাদান হল গ্লুকোজ। অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতের মধ্যে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা থাকে। রক্ত গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে এড্রিনাল মেডুলা এবং অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্সের ০০-কোষ উদ্দীপ্ত হয়। এর ফলে এড্রিনাল মেডুলা যেতে এপিনেফ্রিন এবং ৫- কোষ থেকে গ্লুকাগোন হরমোন নিঃসৃত হয়। এপিনেফ্রিনের প্রভাবে যকৃৎ ও পেশী থেকে গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজে উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে গ্লুকাগোনের প্রভাবে শুধুমাত্র যকৃৎ থেকে গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি হয়। গ্লুকাগন আবার নিওগ্লুকোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় অ্যামাইনো এসিড থেকে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে। এই সকল গ্লুকোজ রক্তে এসে স্বাভাবিক মাত্রা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। গ্লুকাগোন ইনসুলিনের ক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে আর এপিনেফ্রিন ইনসুলিনের ক্ষরণরে রোধ করে। ফলে রক্তের স্বাভাবিক গ্লুকোজমাত্রা অপরিবর্তিত থাকে।


আবার রক্তে যদি গ্লুকোজের আধিক্য দেখা যায় তবে অগ্নাশয়ের আইলেটস-অব-ল্যাঙ্গারহ্যান্সের -কোষ উদ্দীপ্ত হয় এবং ইনসুলিন ক্ষরণ করে। ইনসুলিন গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত করে যা যকৃৎ ও পেশীতে জমা থাকে। এছাড়া কোষের মধ্যে গ্লুকোজের প্রবেশ ও জারণকে ত্বরান্বিত করে। প্রতি ক্ষেত্রে গ্লুকোজের পরিমাণ ফিড ব্যাক কৌশলের চালিকা শক্তি হিসেবে ক্রিয়া করে। প্রথম ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের নিম্নমাত্রা প্রারম্ভিক ফ্যাক্টররূপে এপিনেফ্রিন ও গ্লুকাগোন হরমোন ক্ষরণকে প্রভাবিত করে যার ফলে প্রারম্ভিক ফ্যাক্টর (গ্লুকোজ)-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ বিপরীতমুখী পরিবর্তন ঘটে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধিতে ইনসুলিন ক্ষরিত হয় যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে। এক্ষেত্রে প্রারচর ফ্যাক্টরের বিপরীতমুখী পরিবর্তন ঘটে। উপরের ঘটনা দুটি ঋণাত্মক ফিড ব্যাক (Nagative feed back) এর इन्स (চিত্র-১০.৩ দ্রষ্টব্য)। প্রতিক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা রোধপূর্বক স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

Leave a Comment